এক দিনেই ৩৭ নাগরিকের শিরোশ্ছেদ- রীতিমতো গা শিউরে ওঠা ঘটনা। যদিও সৌদিতে এমনটি অহরহ ঘটছে। বিষয়টি কল্পনামাত্র আমাদের মনোজগতে ভেসে ওঠে ধারালো অস্ত্র, কালো কাপড়ে মুণ্ডিত মস্তক, পেছনে বাঁধা দুই হাত আর তাজা রক্তের ধারা।
বরাবরের মতো এই খবরেও আঁতকে উঠেছে বিশ্বের অগণিত মানুষ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই মৃত্যুদণ্ডের আগের বিচার প্রক্রিয়াকে 'সাজানো' বলে অভিহিত করেছে। শিরোশ্ছেদ করা একটি শরীর পরে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা বিষয়টিকে আরো ভয়ঙ্কর করে তোলে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে এই ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে সেদেশে।
দেশটির রাজধানী রিয়াদ, পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা, কাসিম প্রদেশ ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে গণ হারে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। চরম রক্ষণশীল দেশটিতে একদিনেই ৩৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বাধিক। ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি যুবরাজ মনোনীত হওয়ার পর এই প্রথম এত বড় গণমৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া এবং সন্ত্রাসী দল গঠনে ভূমিকা রাখার দায়ে ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের দাবি, দণ্ডপ্রাপ্তরা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা, নিরাপত্তা অবকাঠামোতে হামলা এবং রাষ্ট্রের শত্রুকে সহায়তার জন্য তারা দোষী সাব্যস্ত হন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন সুন্নির মরদেহ রশিতে ঝুলিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৭ জনের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। আর ১৪ জনের বিরুদ্ধে ছিল সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ। তারা ২০১১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সৌদি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়।
ওই বিক্ষোভের ফলে সৌদি শিয়া সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল দেশটির পূর্ব প্রদেশটি অশান্ত হয়ে ওঠে। তারা শিয়াদের ওপর বৈষম্য বন্ধ ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি করে।
অসন্তোষ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালে শিয়া নেতা নিমর আল-নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে ইরানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে দেশটি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ৩৭ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে যার বয়স গ্রেপ্তারের সময় ১৭ বছর ছিল। তবে সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করতেন এবং তিনি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা পরিচালক লিন মালোফ বলেন, 'সাজানো বিচার'-এর পর দণ্ডপ্রাপ্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, দেশের শিয়া সংখ্যালঘুদের ভেতর থেকে ভিন্নমত দমনের জন্য মৃত্যুদণ্ড কীভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে- এই ঘটনার আরো এক বিস্ময়কর ইঙ্গিত।'
সৌদি প্রেস এজেন্সিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে অন্তত ১০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
Ryan Haywood
3 minutes ago
Relax my friend
Gavino Free
3 minutes ago
Ok, cool.